জমি জমাকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময় বিরোধ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা
যায়, নিজের কেনা জমি অন্য কেউ দখল করে মালিকানা দাবি করছে কিংবা জাল দলিল
তৈরি করে জমির দখল নিতে চায়। আদালতে মিথ্যা মামলাও ঠুকে দেয়। কিন্তু একটু
সচেতন হলেই এ ঝামেলা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সে জন্য জানা থাকতে
হবে জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে কীভাবে প্রতিকার পাবেন।
ফৌজদারি প্রতিকার জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে। কোনো মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতি পক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার কে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন পুলিশকে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করার জন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।
মালিকানা দাবি করবেন যেভাবে জমির মালিকানা বা স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। জমি অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পেতে পারেন। এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী জমির মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমিটি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন। তবে এ ধারা অনুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে জমিতে তাঁর স্বত্ত্ব বা মালিকানা আছে কিংবা মালিকানার দাবি রয়েছে, তার ঘোষণা চাইতে হবে। না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। ৮ ধারার স্বত্ত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলাকে সাধারণত স্বত্ত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছে এটি প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তাঁর মাধ্যমে দাবিদার কোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলোবাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবী করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না; বিবাদী তাঁকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না; বিবাদী বে আইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না।
তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবে তাঁকে। তবে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধারায় প্রতিকার চাওয়া যাবে না।
কোথায় ও কীভাবে আইনের আশ্রয় নেবেন জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার মূল্যমান চার লাখ টাকার কম হলে সহকারী জজ আদালতে এবং চার লাখের বেশি হলে অসীম এখতিয়ার পর্যন্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে। মামলা দায়ের করতে হবে আইনজীবীর মাধ্যমে। মালিকানাসহ দখলের প্রতিকার চাইলে জমির মূল্য বাবদ অ্যাড-ভ্যালোরেম (মূল্যানুপাতে) কোর্ট ফি দিতে হবে। ৯ ধারা অনুযায়ী শুধু দখলের জন্য প্রতিকার চাইলে সম্পত্তির মূল্য অনুসারে যে কোর্ট ফি তার অর্ধেক, অর্থাৎ অ্যাড-ভ্যালোরেম কোর্ট ফির অর্ধেক পরিমাণ কোর্ট ফি দিতে হবে। জমির মালিকানাসহ দখল কিংবা শুধু দখল চেয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে যদি বাদী মনে করেন, তাঁর জমিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন পৃথক আবেদনের মাধ্যমে।
জমি কেনার সময় ক্রেতাদের যা করণীয়
প্রত্যেকের জীবনেই জমি কিনে বাড়ি করার একটা স্বপ্ন থাকে। তবে জমি কেনার সময় কয়েকটা ব্যাপারে ক্রেতাদের সজাগ থাকতে হবে, যাতে পরবর্তীকালে কোন ঝামেলাতে না জড়িয়ে পড়তে হয়।
ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ানোর আগে জেনে নিতে হবে, যে জমিটা কেনা হচ্ছে তার কোন আইনি সমস্যা আছে কিনা।
ক্রেতা যার থেকে কিনছে সে ওই জমিটা বিক্রি করতে পারবে কিনা? সেরকম হলে উকিলের পরামর্শ নিতে হবে, রেজিস্ট্রি করার আগে দেখে নিতে হবে জমিটা এক না অংশীদারি মালিকানার অন্তর্গত।
জমি রেজিস্ট্রেসনের সময় ভুললে চলবে না যে জমিটা কেনা হচ্ছে সেটা কোন বড় সমিতি, বড় কন্সট্রাকশন, বা সরকারি জমির আওতার অন্তর্গত কি না? সেটা মুচলেকাতে লিখিয়ে নিতে হবে ।
জমির টাকা হস্তান্তর করার আগে দেখে নিতে হবে জমিটার মালিক জমির সমস্ত ট্যাক্স, ও অন্যান্য বিল মিটিয়েছে কিনা। সরকারি দপ্তর বা মিনিউসিপালিটিতে খোঁজ নিয়ে তা জেনে নিতে হবে ।
অনেক সময় দেখা যায়, জমির মালিক জমিটা মরডগেজ দিয়ে লোন নিয়েছে। কাজেই জমি রেজিস্ট্রেসনের আগে এটাও দেখার বিষয় যে জমির মালিকের লোনের টাকা পরিশোধ হয়েছে কিনা?
জমি রেজিস্ট্রেসনের আগে দেখে নিতে হবে যে, যে পরিমাণ জমির টাকা দেওয়া হচ্ছে সেই পরিমাপের জমি ক্রেতা পাচ্ছে কিনা? দরকার হলে জমিটি সরকারি কর্মচারী দিয়ে মেপে নিতে হবে ।
আগের সমস্ত অর্থনৈতিক ও আইনি নথি ঠিক থাকলে, একটা চুক্তিনামা করিয়ে নিতে হবে, যাতে ওই জমির মালিক পরে জমির দাম বৃদ্ধি, বা অন্য কোন ক্রেতাকে বেশি মূল্যে জমিটি বিক্রি না করতে পারে ।
একটি ৫০টাকার সরকারি চুক্তিপত্র কিনে তাতে জমিটির মূল্য, আগাম দেওয়া টাকার পরিমান, সময় সবকিছু লিখে নিতে হবে, যাতে কোন পক্ষই আইনি জটিলাতায় না পরে । খুব ভাল হয় যদি এই কাজটি করার সময় দু’পক্ষের উকিল ও দু’জন সাক্ষী থাকে। পাকেচক্রে কোন পক্ষ সমস্যার সম্মুখীন হলে যাতে অপর পক্ষের বিরূদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। রেজিস্ট্রি হল জমির হস্তান্তারের দুপক্ষেরই প্রমাণ পত্র ।
অভয় দিয়ে বলা জেতে পারে উপরিউক্ত বিষয়গুলির ওপর দৃষ্টিপাত করে জমি কিনলে জমির পেছনে টাকা বিনিয়োগ স্বার্থক হবে, ও আইনি কোন সমস্যার মুখেও পরতে হবে না।
জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল ও রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম
ভূমি হস্তান্তরের দলিল স্ট্যাম্পের উপর সরকার কর্তৃক প্রকাশিত নির্দিষ্ট ফরমেট বা ছক অনুযায়ী তৈরি করতে হবে। এই ছকে ক্রেতা-বিক্রেতার ছবি সংযোজনের নতুন বিধান রাখা হয়েছে।
তামাদি হওয়ার সময় সীমা
তামাদি হওয়ার সময়-সীমা তিন বছর থেকে এক বছর করা হয়েছে। দলিল তৈরী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময়
দলিল তৈরী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মৌখিক দান বা হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন।
মুসলিম পারিবারিক ধর্মীয় আইন অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি মৌখিক দান বা হেবা দলিলো এখন থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই দলিল হবে ঘোষণামূলক। এর জন্য ফি হবে মাত্র ১০০=(একশত) টাকা।
হেবা বা দান কে কাকে করতে পারে: হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে, পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে, ভাই-ভাই, বোন-বোন অথবা ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী থেকে নাতি-নাতনী ও নাতি-নাতনী থেকে নানা-নানী সম্পর্কের মধ্যে হেবা দলিলে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এই নাম মাত্র ১০০ (একশত) টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন: উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। তবে এক্ষেত্রে ওয়ারিশগণের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্টেশন করার প্রয়োজন নেই।
সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন: সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ২০০ (দুইশত) টাকা থেকে ৫০০০(পাঁচ হাজার) টাকা। আগে যা ছিল ৫০০(পাঁচশত) টাকা থেকে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা। এর ফলে বন্ধকি সম্পত্তি কেহ অন্যত্র বিক্রয় করে প্রতারণা বা জালিয়াতির আর কোন সুযোগ পাবে না।
আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্রক্রয় সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন: আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্র ক্রয় দলিলও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বায়না চুক্তির রেজিস্ট্রেশন ও ফি: এখন থেকে বায়না চুক্তি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য বায়নার ক্ষেত্রে ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৫০০/-(পাঁচশত) টাকা এবং ৫ লক্ষ টাকার অধিক থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১,০০০/-(এক হাজার) টাকা। ৫০ লক্ষ টাকার অধিকমূল্য সম্পত্তির জন্য ২,০০০/-(দুই হাজার) টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হবে। বায়না নামা রেজিস্ট্রেশন করা ছাড়া চুক্তি বলবৎ করতে আইনগত কোন সুবিধা পাওয়া যাবে না। আবার বায়নার অবশিষ্ট টাকা জমা না করা হলে কোন মামলা মোকদ্দমা করা যাবে না। সম্পত্তি বিক্রয়ের বায়নানামা চুক্তির ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ১লা জুলাই ২০০৫ থেকে এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে যেসব বায়না হয়েছে কিন্তু এখনও রেজিস্ট্রেশন হয় নাই সেগুলো ১ জানুয়ারি ২০০৬ এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আবার বায়নানামা রেজিস্ট্রেশন না করা এসব চুক্তি কার্যকর বা বাতিল করতে হলে রেজিস্ট্রশনের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ৬ মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল ৩ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
বিঃ দ্রঃ ভবিষ্যতে মামলা মোকদ্দমা থেকে পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পূর্বে পুরুষদের আপসে সম্পত্তি বন্টনের দলিল রেজিস্ট্রেশন বার্ধমূলক করার ফলে ওয়ারিশদের ভোগান্তি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। মাত্র ২০-(বিশ) টাকা মূল্যের স্ট্রাম্পে দলিল করে তা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে এবং সর্বোচ্চ অংশ প্রাপ্ত অংশীদারের সম্পত্তির হিসাব থেকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণের অংশীদারদের ভগে পাওয়া সম্পত্তির মূল্য মানের শতকরা আড়াই ভাগ টাকা সব অংশীদারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ নেওয়া হবে।
ফৌজদারি প্রতিকার জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে। কোনো মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতি পক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার কে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন পুলিশকে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করার জন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।
মালিকানা দাবি করবেন যেভাবে জমির মালিকানা বা স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। জমি অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পেতে পারেন। এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী জমির মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমিটি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন। তবে এ ধারা অনুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে জমিতে তাঁর স্বত্ত্ব বা মালিকানা আছে কিংবা মালিকানার দাবি রয়েছে, তার ঘোষণা চাইতে হবে। না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। ৮ ধারার স্বত্ত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলাকে সাধারণত স্বত্ত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছে এটি প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তাঁর মাধ্যমে দাবিদার কোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলোবাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবী করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না; বিবাদী তাঁকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না; বিবাদী বে আইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না।
তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবে তাঁকে। তবে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধারায় প্রতিকার চাওয়া যাবে না।
কোথায় ও কীভাবে আইনের আশ্রয় নেবেন জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার মূল্যমান চার লাখ টাকার কম হলে সহকারী জজ আদালতে এবং চার লাখের বেশি হলে অসীম এখতিয়ার পর্যন্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে। মামলা দায়ের করতে হবে আইনজীবীর মাধ্যমে। মালিকানাসহ দখলের প্রতিকার চাইলে জমির মূল্য বাবদ অ্যাড-ভ্যালোরেম (মূল্যানুপাতে) কোর্ট ফি দিতে হবে। ৯ ধারা অনুযায়ী শুধু দখলের জন্য প্রতিকার চাইলে সম্পত্তির মূল্য অনুসারে যে কোর্ট ফি তার অর্ধেক, অর্থাৎ অ্যাড-ভ্যালোরেম কোর্ট ফির অর্ধেক পরিমাণ কোর্ট ফি দিতে হবে। জমির মালিকানাসহ দখল কিংবা শুধু দখল চেয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে যদি বাদী মনে করেন, তাঁর জমিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন পৃথক আবেদনের মাধ্যমে।
জমি কেনার সময় ক্রেতাদের যা করণীয়
প্রত্যেকের জীবনেই জমি কিনে বাড়ি করার একটা স্বপ্ন থাকে। তবে জমি কেনার সময় কয়েকটা ব্যাপারে ক্রেতাদের সজাগ থাকতে হবে, যাতে পরবর্তীকালে কোন ঝামেলাতে না জড়িয়ে পড়তে হয়।
ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ানোর আগে জেনে নিতে হবে, যে জমিটা কেনা হচ্ছে তার কোন আইনি সমস্যা আছে কিনা।
ক্রেতা যার থেকে কিনছে সে ওই জমিটা বিক্রি করতে পারবে কিনা? সেরকম হলে উকিলের পরামর্শ নিতে হবে, রেজিস্ট্রি করার আগে দেখে নিতে হবে জমিটা এক না অংশীদারি মালিকানার অন্তর্গত।
জমি রেজিস্ট্রেসনের সময় ভুললে চলবে না যে জমিটা কেনা হচ্ছে সেটা কোন বড় সমিতি, বড় কন্সট্রাকশন, বা সরকারি জমির আওতার অন্তর্গত কি না? সেটা মুচলেকাতে লিখিয়ে নিতে হবে ।
জমির টাকা হস্তান্তর করার আগে দেখে নিতে হবে জমিটার মালিক জমির সমস্ত ট্যাক্স, ও অন্যান্য বিল মিটিয়েছে কিনা। সরকারি দপ্তর বা মিনিউসিপালিটিতে খোঁজ নিয়ে তা জেনে নিতে হবে ।
অনেক সময় দেখা যায়, জমির মালিক জমিটা মরডগেজ দিয়ে লোন নিয়েছে। কাজেই জমি রেজিস্ট্রেসনের আগে এটাও দেখার বিষয় যে জমির মালিকের লোনের টাকা পরিশোধ হয়েছে কিনা?
জমি রেজিস্ট্রেসনের আগে দেখে নিতে হবে যে, যে পরিমাণ জমির টাকা দেওয়া হচ্ছে সেই পরিমাপের জমি ক্রেতা পাচ্ছে কিনা? দরকার হলে জমিটি সরকারি কর্মচারী দিয়ে মেপে নিতে হবে ।
আগের সমস্ত অর্থনৈতিক ও আইনি নথি ঠিক থাকলে, একটা চুক্তিনামা করিয়ে নিতে হবে, যাতে ওই জমির মালিক পরে জমির দাম বৃদ্ধি, বা অন্য কোন ক্রেতাকে বেশি মূল্যে জমিটি বিক্রি না করতে পারে ।
একটি ৫০টাকার সরকারি চুক্তিপত্র কিনে তাতে জমিটির মূল্য, আগাম দেওয়া টাকার পরিমান, সময় সবকিছু লিখে নিতে হবে, যাতে কোন পক্ষই আইনি জটিলাতায় না পরে । খুব ভাল হয় যদি এই কাজটি করার সময় দু’পক্ষের উকিল ও দু’জন সাক্ষী থাকে। পাকেচক্রে কোন পক্ষ সমস্যার সম্মুখীন হলে যাতে অপর পক্ষের বিরূদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। রেজিস্ট্রি হল জমির হস্তান্তারের দুপক্ষেরই প্রমাণ পত্র ।
অভয় দিয়ে বলা জেতে পারে উপরিউক্ত বিষয়গুলির ওপর দৃষ্টিপাত করে জমি কিনলে জমির পেছনে টাকা বিনিয়োগ স্বার্থক হবে, ও আইনি কোন সমস্যার মুখেও পরতে হবে না।
জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল ও রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম
ভূমি হস্তান্তরের দলিল স্ট্যাম্পের উপর সরকার কর্তৃক প্রকাশিত নির্দিষ্ট ফরমেট বা ছক অনুযায়ী তৈরি করতে হবে। এই ছকে ক্রেতা-বিক্রেতার ছবি সংযোজনের নতুন বিধান রাখা হয়েছে।
তামাদি হওয়ার সময় সীমা
তামাদি হওয়ার সময়-সীমা তিন বছর থেকে এক বছর করা হয়েছে। দলিল তৈরী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময়
দলিল তৈরী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মৌখিক দান বা হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন।
মুসলিম পারিবারিক ধর্মীয় আইন অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি মৌখিক দান বা হেবা দলিলো এখন থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই দলিল হবে ঘোষণামূলক। এর জন্য ফি হবে মাত্র ১০০=(একশত) টাকা।
হেবা বা দান কে কাকে করতে পারে: হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে, পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে, ভাই-ভাই, বোন-বোন অথবা ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী থেকে নাতি-নাতনী ও নাতি-নাতনী থেকে নানা-নানী সম্পর্কের মধ্যে হেবা দলিলে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এই নাম মাত্র ১০০ (একশত) টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন: উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। তবে এক্ষেত্রে ওয়ারিশগণের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্টেশন করার প্রয়োজন নেই।
সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন: সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ২০০ (দুইশত) টাকা থেকে ৫০০০(পাঁচ হাজার) টাকা। আগে যা ছিল ৫০০(পাঁচশত) টাকা থেকে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা। এর ফলে বন্ধকি সম্পত্তি কেহ অন্যত্র বিক্রয় করে প্রতারণা বা জালিয়াতির আর কোন সুযোগ পাবে না।
আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্রক্রয় সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন: আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্র ক্রয় দলিলও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বায়না চুক্তির রেজিস্ট্রেশন ও ফি: এখন থেকে বায়না চুক্তি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য বায়নার ক্ষেত্রে ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৫০০/-(পাঁচশত) টাকা এবং ৫ লক্ষ টাকার অধিক থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১,০০০/-(এক হাজার) টাকা। ৫০ লক্ষ টাকার অধিকমূল্য সম্পত্তির জন্য ২,০০০/-(দুই হাজার) টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হবে। বায়না নামা রেজিস্ট্রেশন করা ছাড়া চুক্তি বলবৎ করতে আইনগত কোন সুবিধা পাওয়া যাবে না। আবার বায়নার অবশিষ্ট টাকা জমা না করা হলে কোন মামলা মোকদ্দমা করা যাবে না। সম্পত্তি বিক্রয়ের বায়নানামা চুক্তির ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ১লা জুলাই ২০০৫ থেকে এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে যেসব বায়না হয়েছে কিন্তু এখনও রেজিস্ট্রেশন হয় নাই সেগুলো ১ জানুয়ারি ২০০৬ এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আবার বায়নানামা রেজিস্ট্রেশন না করা এসব চুক্তি কার্যকর বা বাতিল করতে হলে রেজিস্ট্রশনের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ৬ মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল ৩ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
বিঃ দ্রঃ ভবিষ্যতে মামলা মোকদ্দমা থেকে পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পূর্বে পুরুষদের আপসে সম্পত্তি বন্টনের দলিল রেজিস্ট্রেশন বার্ধমূলক করার ফলে ওয়ারিশদের ভোগান্তি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। মাত্র ২০-(বিশ) টাকা মূল্যের স্ট্রাম্পে দলিল করে তা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে এবং সর্বোচ্চ অংশ প্রাপ্ত অংশীদারের সম্পত্তির হিসাব থেকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণের অংশীদারদের ভগে পাওয়া সম্পত্তির মূল্য মানের শতকরা আড়াই ভাগ টাকা সব অংশীদারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ নেওয়া হবে।
Injection কিভাবে চাইতে হয়?
ReplyDeleteInjection কিভাবে চাইতে হয়?
Deleteআপনার জমি কেউ দখল করে নিলে কিভাবে তা ফেরত পাবেন এই বিষয় নিয়ে দারুন একটি ভিডিও দেখুন এখানে
ReplyDeletehttps://www.youtube.com/watch?v=I-7dLj8MjIU
“জমি কেনার সময় কি কি বিষয় দেখা উচিত” এই বিষয়টি নিয়ে আমার দেখা একটি দারুন আইনি ভিডিও আপনারাও দেখতে পারেন । নিচে ভিডিওটির ইউটিউব লিংক দিলাম https://www.youtube.com/watch?v=9NlyIVD-tWg
ReplyDeleteআমার চাচা আমাদের কাছে জমি বিক্রি না করে অন্যে লোকের কাছে (আমাদের আত্বিয়না) বিক্রি করলে ঐ জমি আমি কিভাবে উদ্ধার করতে পারি
ReplyDeleteমনে করুন, একটি জায়গার পরিমান ৬০ শতাংশ। আমি সেই জায়গার ৫০ শতাংশ কিনলাম। এর কয়েকবছর পর অন্য একজন ১০ শতাংশ কিনলো। তখন জায়গা মাপতে গিয়ে দেখা গেলো ঐ প্লটে ৬০ শতাংশের জায়গায় ৫৫ শতাংশ আছে। তাহলে জায়গা বন্টনে ঐ ৫ শতাংশ জায়গা কোন পক্ষ কম পাবে?
ReplyDeleteভাই আমি জানতে চাচ্ছি ধরুন আমি আমার বাড়ির কাজ বা উন্নয়ন করতে চাচ্ছি, কেউ শত্রুতা করে ভুয়া ইনজাংশন জারি করে কাজ বনধ করতে চাচ্ছে । তার পুর্বেই আইনগত ভাবে কোনো কিছু করণীয় আছে কি? বা অগ্রীম ইনজাংশন রধ করার কোন উপায় কি আছে?
ReplyDeleteআমার জমি নিয়ে বড় বিপদে আছি ।আপনার সাথে যোগাযোগের নম্বর টা যদি দিতেন অনেকটা উপকৃত হতাম ।
ReplyDelete১ কানী জমী বিক্রি হল কিন্তু জমীর মাপ সম্পূর্ন করা হল না। এক্ষেত্রে জমীর ফসল কী ভোগ করা যাবে?
ReplyDelete