আবদুল জলিলের একটি মাত্র মেয়ে। আর কোনো সন্তান নেই তাঁর। বিশ্ববিদ্যালয়ে
লেখাপড়া করেন তাঁর মেয়ে। আবদুল জলিল তাঁর সব সম্পত্তি মেয়েকে দিয়ে যেতে
চান। কিন্তু তাঁর দুই ভাই এবং ভাইয়ের ছেলেরা জীবিত। তাঁর ভাই কিংবা
ভাইয়ের ছেলেরা তাঁর সম্পত্তির অংশীদার হোক, এটি তিনি চান না। এখন তিনি কী
করবেন? তাঁর জীবিতাবস্থায় কি তাঁর একমাত্র মেয়েকে সম্পত্তির মালিক করে
দিতে পারবেন? এর সমাধান আছে আইনে। আইন অনুযায়ী, আবদুল জলিলকে
জীবিতাবস্থায় তাঁর সম্পত্তি মেয়েকে দান করে যেতে হবে। মুসলিম আইনে দানকে
হেবা বলা হয়।
দান কীভাবে করতে হয়
সাধারণত দানের মাধ্যমে একজন সম্পত্তির মালিক তাঁর ওয়ারিশ কিংবা অন্য যে কাউকে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। এটি আইন স্বীকৃত। সাধারণত কেনাবেচার ক্ষেত্রে দামের বিনিময় হয়, কিন্তু দানের ক্ষেত্রে এ রকম বিনিময় হয় না। দান করতে হলে দাতার এবং গ্রহীতার সম্পূর্ণ ইচ্ছা ও সম্মতি থাকতে হয়। দান বা হেবা করতে হয় নিঃস্বার্থ। তবে দান করার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথমত, হেবা বা দানকারীকে দানের ঘোষণা দিতে হবে অথবা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করেও ঘোষণা দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যাঁকে হেবা বা দান করা হচ্ছে, তাঁর দ্বারা সম্পত্তি গ্রহণ করতে হবে। আর তৃতীয় শর্ত হচ্ছে, দানকৃত সম্পত্তির দখল সঙ্গে সঙ্গেই হস্তান্তর করা। এখন ওপরের ঘটনায় আবদুল জলিল তাঁর মেয়েকে সব সম্পত্তি দানপত্রের মাধ্যমে দান করে দিয়ে যেতে পারেন। দান করে দিলে তাঁর মেয়েকে ওই সম্পত্তি সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে। নাবালক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে সম্পত্তি দান করা যায়, তবে হস্তান্তর করা যাবে না, যত দিন না ও প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বৈধ অভিভাবককে ওই সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে। পরবর্তী সময়ে নাবালক সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে।
দান আর উইল এক বিষয় নয়
অনেকে মুসলিম আইনে দানকে উইলের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। মনে রাখতে হবে, উইল জীবিতাবস্থায় কার্যকর করা যায় না। একমাত্র উইল ঘোষণাকারীর মৃত্যুর পর উইল কার্যকর হয়, কিন্তু দানের ক্ষেত্রে দাতার জীবিতাবস্থায় কার্যকর হয়। তবে দানের ক্ষেত্রে জীবিতাবস্থায় সম্পত্তি হস্তান্তর করে দিতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখতে হবে, মুসলিম আইনে উইলের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীদের অনুমতি ছাড়া সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি কার্যকর হবে না, কিন্তু হেবা বা দান পুরো সম্পত্তিই করা যাবে।
করতে হবে নিবন্ধন
দানের দলিল নির্ধারিত ফরমে এবং স্ট্যাম্পে করতে হবে। দানের দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। ২০০৫ সালের ১ জুলাইয়ের পর থেকে হেবা বা দানকৃত সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দান কি বাতিল করা যায়
একবার দান করার পর এবং সম্পত্তি হস্তান্তর করার পর আদালতের ডিক্রি ছাড়া বাতিল করা যাবে না। তবে দানপত্র সম্পাদন করলেও সম্পত্তিটি হস্তান্তর না করা হলে কিছু ক্ষেত্রে দানপত্র বাতিল করা যায়। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দান, দানগ্রহীতা যদি মারা যায়, যখন দাতা কিছুর বিনিময়ে গ্রহণ করবে, সম্পত্তি যখন ধ্বংস হয়ে যাবে প্রভৃতি।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
দান কীভাবে করতে হয়
সাধারণত দানের মাধ্যমে একজন সম্পত্তির মালিক তাঁর ওয়ারিশ কিংবা অন্য যে কাউকে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। এটি আইন স্বীকৃত। সাধারণত কেনাবেচার ক্ষেত্রে দামের বিনিময় হয়, কিন্তু দানের ক্ষেত্রে এ রকম বিনিময় হয় না। দান করতে হলে দাতার এবং গ্রহীতার সম্পূর্ণ ইচ্ছা ও সম্মতি থাকতে হয়। দান বা হেবা করতে হয় নিঃস্বার্থ। তবে দান করার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথমত, হেবা বা দানকারীকে দানের ঘোষণা দিতে হবে অথবা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করেও ঘোষণা দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যাঁকে হেবা বা দান করা হচ্ছে, তাঁর দ্বারা সম্পত্তি গ্রহণ করতে হবে। আর তৃতীয় শর্ত হচ্ছে, দানকৃত সম্পত্তির দখল সঙ্গে সঙ্গেই হস্তান্তর করা। এখন ওপরের ঘটনায় আবদুল জলিল তাঁর মেয়েকে সব সম্পত্তি দানপত্রের মাধ্যমে দান করে দিয়ে যেতে পারেন। দান করে দিলে তাঁর মেয়েকে ওই সম্পত্তি সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে। নাবালক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে সম্পত্তি দান করা যায়, তবে হস্তান্তর করা যাবে না, যত দিন না ও প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বৈধ অভিভাবককে ওই সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে। পরবর্তী সময়ে নাবালক সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে।
দান আর উইল এক বিষয় নয়
অনেকে মুসলিম আইনে দানকে উইলের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। মনে রাখতে হবে, উইল জীবিতাবস্থায় কার্যকর করা যায় না। একমাত্র উইল ঘোষণাকারীর মৃত্যুর পর উইল কার্যকর হয়, কিন্তু দানের ক্ষেত্রে দাতার জীবিতাবস্থায় কার্যকর হয়। তবে দানের ক্ষেত্রে জীবিতাবস্থায় সম্পত্তি হস্তান্তর করে দিতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখতে হবে, মুসলিম আইনে উইলের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীদের অনুমতি ছাড়া সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি কার্যকর হবে না, কিন্তু হেবা বা দান পুরো সম্পত্তিই করা যাবে।
করতে হবে নিবন্ধন
দানের দলিল নির্ধারিত ফরমে এবং স্ট্যাম্পে করতে হবে। দানের দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। ২০০৫ সালের ১ জুলাইয়ের পর থেকে হেবা বা দানকৃত সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দান কি বাতিল করা যায়
একবার দান করার পর এবং সম্পত্তি হস্তান্তর করার পর আদালতের ডিক্রি ছাড়া বাতিল করা যাবে না। তবে দানপত্র সম্পাদন করলেও সম্পত্তিটি হস্তান্তর না করা হলে কিছু ক্ষেত্রে দানপত্র বাতিল করা যায়। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দান, দানগ্রহীতা যদি মারা যায়, যখন দাতা কিছুর বিনিময়ে গ্রহণ করবে, সম্পত্তি যখন ধ্বংস হয়ে যাবে প্রভৃতি।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
No comments:
Post a Comment