Tuesday, August 19, 2014

ভূমি





ভূমি রেজিষ্ট্রেশন
সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়কে স্থায়ী করে রাখবার একটি চমৎকার উপায় হইতেছে রেজিষ্ট্রেশন আইন। সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় মৌখিকভাবে হতে পারে। আবার লিখিত দলিল দ্বারাও হতে পারে। কিন্তু মৌখিকভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের বিপদ অনেক। প্রতারিত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সময়ের সাথে সাথে সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি পায়। ফলে অনেকেই লোভ সম্বরণ করতে না পেরে ছলে বলে এবং কৌশলে কি করে অন্যের সম্পত্তি আত্মসাত করা যায় তার প্রচেষ্টা চালায়। যিনি সম্পত্তি বিক্রয় করেন তিনি লোভের বশবর্তী হয়ে বিক্রয়টি অস্বীকার করিতে পারেন বা সম্পূর্ণ বিক্রয় মূল্য পান নাই বলে আপত্তি উপস্থাপন করতে পারেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে সম্পত্তি মৌখিকভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের বিপদ অনেক। কিন্তু লিখিত দলিল দ্বারা সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করলে বিপদ অনেক কম থাকে। এমনকি প্রতারিত হবার সম্ভাবনাও কম থাকে। কেননা লিখিত দলিল মৌখিক দাবীর চাইতে মূল্যবান এবং অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। লিখিত দলিল থাকলে মিথ্যা দাবী তুলে ক্রয়-বিক্রয় অস্বীকার করিয়া সুবিধা করা যায় না। কিন্তু লিখিত দলিল কি সব সময় নিরাপদ? না তাও নয়। কেননা লিখিত দলিল দ্বারাও প্রতারণার সম্ভাবনা থাকে। দলিল লিখিয়া তাহা দশ পনের বৎসর পূর্বে সম্পাদিত হয়েছিল। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় লিখিত দলিল দ্বারা হলেই যে বিপদের আশংকা থাকে না, তা নয়। এই আশংকা দূর করবার বিধান রেজিষ্ট্রেশন আইনে দেওয়া হয়েছে। যাহাতে লিখিত দলিলের পিছনের তারিখ দিয়া দলিল রেজিষ্ট্রি করে নেওয়া সম্ভব না হয়। কারণ এই আইনে দলিল সম্পাদনের চার মানের মধ্যেই রেজিষ্ট্রির জন্য দলিল দাখিল করার বিধান দেওয়া হয়েছে। লিখিত দলিল হারিয়ে যাইতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে, অপাঠ্য বা অস্পষ্ট হয়ে পড়িতে পারে। কিন্তু দলিলখানি যদি রেজিষ্ট্রি হইয়া থাকে তা হলে সহজেই দলিলের নকল নেওয়া যেতে পারে। রেজিষ্ট্রেশন আইনের বলেই তা সম্ভব হয়েছে। বহু বৎসরের অতিকভজ্ঞতার ফসল এই রেজিষ্ট্রেশন আইন। ডোমার উপজেলা থেকে চিলাহাটির দুরত্ব ২০ কিঃমিঃ। ফলে দুরত্ব বিবেচনা করে চিলাহাটিতে একটি সাব রেজিষ্ট্রি অফিস রয়েছে যেখানে সপ্তাহে দিন জমি রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। ডোমার উপজেলায় মোট টি সাব রেজিষ্ট্রি অফিস রয়েছে। রেজিষ্ট্রেশনের ফি নিম্নে উলেস্নখ করা হলোঃ



রেজিষ্ট্রেশন আইনের প্রকৃতিঃ 
জেরিমি বেনথামের মতে সাবস্টেন্টিভ অথবা এ্যাডজেকটিভ ধরণের হইবে। প্রথমটি হচ্ছে মূল আইন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রথমটিকে বাস্তবায়ন করিবার পদ্ধতিগত আইন, দ্বিতীয়টি আদালত পরিচালনার পদ্ধতি, পক্ষগণের উপর সমন জারীর পদ্ধতি, সাক্ষী দলিলাদি হাজির করিবার ইত্যাদি পদ্ধতির বিষয় বর্ণনা করে। এই আইনকে কার্যকরী করার জন্য বিধিমালা প্রণয়নের বিধান এই আইনে রয়েছে। এই আইনটি রেজিষ্ট্রি দ্বারা দলিলের সত্যতা সম্পর্কে মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মায়



রেজিষ্ট্রেশন আইনের উদ্দেশ্যঃ 
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সম্পত্তি সম্পর্কিত স্বত্ত্বের জার দলিল প্রণয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করা এবং দলিলের যথার্থতা সম্পর্কে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা বিধান করাই রেজিষ্ট্রেশন আইনের উদ্দেশ্য। জালদলিল মিথ্যা স্বাক্ষী দ্বারা সমর্থিত মিথ্যা দাবির উপর প্রতিষ্ঠিত এরূপ সম্পত্তি বিষয়ক মামলা প্রতিরোধ করবার অভিপ্রায়েই এই আইনের সৃষ্টি হয়েছে। রেজিষ্ট্রীকরণের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হইল, স্থাবর-সম্পত্তির ক্রেতাদের স্বত্ত্বের অবস্থা নির্ণয়ের অবলম্বন প্রদান করা। রেজিষ্ট্রীকরণের উদ্দেশ্য হইল-স্বত্ত্বের নিশ্চয়তা প্রদান করা জাল-জালিয়াতি গোপনীয় আদান-প্রদান প্রতিরোধ করা এবং একটি সম্পত্তিতে একজন ব্যক্তির এরূপভাবে অর্জিত স্বত্ত্ব পরাভূত করা। রেজিষ্ট্রীকরণ পদ্ধতি স্বত্ত্বের নিশ্চয়তা প্রদান করছে। কারণ মূল দলিল হারিয়ে গেলে বা বিনষ্ট হলেও স্বত্ত্ব হায়ায় না বা নিবষ্ট হয় না। রেজিষ্ট্রীকরণ আই স্বত্ত্ব প্রমাণ করবোর সুযোগের বিধান রেখেছে। রেজিষ্ট্রেশন আইন কর্তৃক দলিলের রেজিষ্ট্রী বাধ্যতামূলক করেছে। রেজিষ্ট্রীযোগ্য দলিল রেজিষ্ট্রী ব্যতীত বৈধ নয়, এরূপ দলিলের বৈধতা নির্ধারণের প্রয়োজনে বা সাক্ষ্যে গ্রহণযোগ্যতা আণয়নের জন্য রেজিষ্ট্রীর আবশ্যক হয় না। একই সম্পত্তি সম্পর্কিত একটি রেজিষ্ট্রীকৃত এবং অন্যটি রেজিষ্ট্রীবিহীন দলিলের মধ্যে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে প্রথমটিই শক্তিশালী হয়। তেমনি রেজিষ্ট্রীকৃত উইল ব্যতীত অন্য সকল প্রকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কিত দলিল সম্পত্তি বিষয়ক অপর কোন মৌখিক চুক্তি বা ঘোষণা অগ্রাহ্য করে বলবৎ হবে। শুধুমাত্র যে সকল ক্ষেত্রে মৌখিক চুক্তির সঙ্গে সঙ্গে বা অব্যাবহিত পরেই সম্পত্তির দখল হস্তান্তরিত হয়, সে ক্ষেত্রে এইরূপ ব্যবস্থা প্রচলিত বিধান অনুসারে আইনানুগ হবে। আইন আরো বিধান করেছে যে, একটি দলিল অবশ্যই রেজিষ্ট্রীকরণের জন্য যথাযথ রেজিষ্ট্রী অফিসে এবং সম্পাদনের তারিখ হইতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দাখিল করতে হবে। ইহার পর প্রথমতঃ রেজিষ্ট্রারী কর্মকর্তাকে অনুসন্ধান নির্ণয় করতে হয় যে, প্রশেড়বাক্ত দলিল সম্পর্কে আইনের বিধানাবলী প্রতিপালিত হয়েছে কিন, এবং দ্বিতীয়তঃ দলিলটি সম্পাদিত হয়েছে কিনা। যদি এই দুইটি বিষয়ে, তিনি সন্তুষ্ট হন, তবে তিনি দলিলটি গ্রহণ করে সঠিক বহি বাবালামে নকল করাবেন এবং দলিলে তাঁর অফিসের মোহরাঙ্কিত এবং তাঁর স্বাক্ষর যুক্ত পূর্বক তা রেজিষ্ট্রী করা হয়েছে এই প্রত্যায়ন প্রদান করে দাখিলকারক বা তাহার প্রতিনিধিকে দলিলটি ফেরত দিবেন। উইল ব্যতীত স্তাবর সম্পত্তি বিষয়ক দলিলের বহি বা বালাম সর্ব-সাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত। সংক্ষেপে উপরোক্ত বিষয়াবলী রেজিষ্ট্রীকরণ আইনের প্রধান প্রধান বিধান। রেজিষ্ট্রীকৃত
দলিলের মাধ্যমেই স্থাবর সম্পত্তির আদান প্রদান কার্যকর হবে। এই আইনে এমন কোন বিধান সৃষ্টি করে নাই। যাহা প্রয়োজন হচ্ছে-স্থাবর-সম্পত্তি বিষয়ক কতক দলিল অবশ্রই রেজিষ্ট্রী করতে হবে এবং সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত একটি রেজিষ্টারে এরূপ রেজিষ্ট্রীকৃত দলিলসমূহ নকল করে রাখতে হবে। উপরোক্ত আলোচনা হতে রেজিষ্ট্রেশন আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব-যাহার সার-সংক্ষেপ এরূপঃ
() দলিলের যথার্থতা সম্পর্কে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা বিধান করা;
() আদান-প্রদানের প্রচার প্রদান করা;
() জাল-জালিযাতি প্রতিরোধ করা;
() একটি সম্পত্তির ইতিপূর্বে কোন বিধি-ব্যবস্থা হয়েছে কিনা উহা নির্ণয়ের সুযোগ প্রদান করা; এবং
() স্বত্ব-দলিলের নিরাপত্তা বিধান করা এবং মূল দলিল হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে স্বত্ব প্রমাণের সুযোগ বিধান করা
রেজিষ্ট্রেশন আইন সৃষ্টির এই উদ্দেশ্যসমূহ যদি যথাযথভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হয়, তবে আইন প্রণয়নের দুই শতাব্দী কাল পরেও রেজিষ্ট্রেশন আইন আজ যে বিকশিত অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় উহা সঠিকভাবে অনুসরণ করলে, আইন সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিকট এই আইনের বিভিনড়ব ধারার তাৎপর্য স্পষ্টভাবেই প্রতিভাত হবে

No comments:

Post a Comment