Tuesday, August 19, 2014

মুসলিম আইনে হেবা বা দান

কখন দান করা যায়: দান সাধারণত দু,অবস্থায় করা যায়। যেমন -
(ক) সুস্থ অবস্থায়
(খ) মৃত্যু ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায়।

সুস্থ অবস্থায় দান: সাধারণত দাতা যখন সুস্থ থাকেন, তখনই তিনি দান করতে পারেন এবং সে দান, দানের শতাবলী - সাপেক্ষে কাযকরী হয়ে থাকে।

দানের প্রমাণ: মুসলিম আইন অনুসারে একজন সম্পত্তির মালিক তার মালিকাধীন সম্পত্তির সবটা কিংবা আংশিক হেবার মাধ্যমে দান করতে পারেন।
দাতার দানসংক্রান্ত বিষয় যারা প্রমাণ করতে চায় তাদেরকে এটি প্রমাণ করতে হবে যে দানটি যথারীতি সম্পাদিত হয়েছে।দখলের বিষয়টি যতটুকু সম্ভব ততটুকু অপির্ত না হলে দানটি বৈধ হবে না।এছাড়া দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ই দানটি মৌখিকভাবে হয়েছিল বলে স্বীকার   করেছেন এবং গ্রহীতা দানটি গ্রহণ করেছেন, এবং অন্যান্য প্রমাণেও দেখা যায় যে, দানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেক্ষেত্রে দান করার বিষয়টি প্রমানিত বলে গণ্য হবে।একইভাবে হেবা বিল-এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল কালের আবশ্যকতা নেই।কেবলমাত্র প্রতিদানটি প্রকৃতভাবে প্রদত্ত হয়েছে কিনা এবং তা কাযগ্রহীতা কতৃর্ক গ্রহণ প্রমাণই যথেষ্ঠ।

দানটি পরে হলে,
হেবার নিয়মানুযায়ী হেবার ঘোষণার উপর দখল অর্পণ ছাড়া হেবা সম্পূর্ণ হয় না।তবে অনেক ক্ষেত্রে পরে অর্পণ করলে চলে। 
কে প্রশ্ন করতে পারে?
দাতা বা তার মাধ্যমে দাবীকারী ব্যক্তি, অথবা দানগ্রহীতা বা তার মাধ্যমে দাবীকারী ব্যক্তি, আগন্তুক নয়, দানের বিষয়বস্তুর হস্তান্তর সম্পকির্ত প্রশ্ন তুলতে পারে।
মৃত্যু ব্যধিগ্রস্ত অবস্থায় দান: মৃত্য ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় দান করা বৈধ নয়।কিন্তু দানকৃত সম্পদ গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করলে সবাধিক ১/৩ অংশ সম্পত্তিতে তা কাযকর হবে এবং হস্তান্তরের আগেই দাতা মারা গেলে দানটি বাতিল বলে গণ্য হয়।
দান প্রমানের দায়িত্ব: মুসলিম অাইনের বিধান মতে একজন সম্পত্তির মালিক তার মালিকাধীন সবটা কিংবা আংশিক হেবার মাধ্যমে দান করতে পারেন।দাতার দান সংক্রান্ত বিষয় যারা প্রমাণ করতে চায় তাদেরকে এটি প্রমাণ করতে হবে যে দানটি যথারীতি সম্পাদিত হয়েছে।দখলের বিষয়টি    যতটুকু সম্ভব ততটুকু অপির্ত না হলে দানটি বৈধ হবে না।অনুরুপভাবে হেবা-বিল-এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল কালের অাবশ্যকতা নেই।কেবলমাত্র প্রতিদানটি প্রকৃতভাবে প্রদত্ত হয়েছে কিনা এবং তাত্‍ক্ষণিকভাবে দাতা দান সম্পত্তি দানগ্রহীতার অনুকূলে অপির্ত এবং কাযর্গ্রহীতা দ্বারা গ্রহণ প্রমাণই যথেষ্ট ।অথাত্‍ যখন দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ই দানটি মৌখিকভাবে হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন এবং গ্রহীতা দান করেছেন, এবং অন্যান্য প্রমাণে দেখা যায় যে দানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেক্ষেত্রে দান করার বিষয়টি প্রমাণিত বলে গণ্য হবে।
দানটি পরে হলে হেবার নিয়মানুযায়ী হেবার ঘোষনার উপর দখল অর্পণ ছাড়া হেবা সম্পূর্ণ হয় না।তবে অনেক ক্ষেত্রে পরে অর্পণ করলে চলে।

কে প্রশ্ন তুলতে পারে?
দানগ্রহীতা বা তার মাধ্যমে দাবীকারী ব্যক্তি, অাগন্তুক নয়, দানের বিষয়বস্তুর হস্তান্তর সম্পকিত প্রশ্ন তুলতে পারে।

মুশাহ বা অবিভাজ্য সম্পত্তি: মুশাহ শব্দের অর্থ অবিভক্ত অংশ।কোন একজন মুসলমানের স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তিতে অবিভক্ত অংশ থাকলে একে 'মুশাহ' বলা হয়।বিভাগযোগ্য বস্তু বা সম্পত্তিতে ভাগ না হয়ে থাকলে সেখানে বিশৃংখলার সৃষ্ট হতে পারে।সেখানে যাতে বিশৃংখলার সৃষ্টি হতে না পারে তা রোধই মূলত মুশার উদ্দেশ্য।কেননা এটি দখলের সাথে সম্পকির্ত। যে সম্পত্তি যে স্থলে ভাগ করা যায় সেখানে তা ভাগ করে দখল দান করলে বিশৃংখলা হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
ডি.এফ মোল্লার মতে "Musha is an undivided share in Property either movable or immovable"

সম্পত্তি অবিভাজ্য হলে মুশাহর দান:
সম্পত্তি যদি ভাগ না করা যায় সে সম্পত্তির প্রাপ্য অবিভক্ত অংশ (মুশা) হেবা বা দান করা যায়।অথাত্‍ সম্পত্তিটি এই প্রকৃতির হয় যে, ভাগ বাটোয়ারা করার চাইতে অবিভাজ্য অবস্থায় এর ভোগ দখল বেশী লাভজনক ,তবে মুশাহ বা অবিভক্ত সম্পত্তির দান বৈধভাবে করা যাবে।

উদাহরণ:১) কবির একটি বাড়ীর মালিক। সে নইমকে উক্ত বাড়ী এবং পার্শ্ববতী একটি বাড়ীর মালিকের সাথে যৌথভাবে ব্যবহূত  একটি সিড়ি ব্যবহ্রারের অধিকার হেবা করে দিল।উক্ত সিড়িতে কবিরের অবিভক্ত অংশের হেবা বা দান বৈধ।কারণ সিড়িটি বিভাগযোগ্য নয়।
২) একটি পুকুরের পানির অংশ ভাগ করা সম্ভব নয় ,কাজেই এরা অবিভাজ্য অংশ, একটি বৈধ দানের বিষয়বস্তু হতে পারে।
৩) তেমনিভাবে, একটি পুকুরের অবিভক্ত পাড় প্রকৃতিগতভাবে ভাবেই ভাগ করার চাইতে অবিভক্ত অবস্থায় সুবিধাজনকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
সুতরাং উপরোক্ত অবিভক্ত সম্পত্তি অবিভক্ত অবস্থায় বৈধভাবে দান করা যাবে।
সম্পত্তি বিভাজ্য হলে মুশাহর দান:
যে সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করা যায় অথাত্‍ বিভাগযোগ্য সম্পত্তির অবিভক্ত অংশের বা মুশাহর দান অনিয়মিত (ফাসিদ)হবে কিন্তু বাতিল হবে না।দানটি অনিয়মিত, কিন্তু বাতিল না হওয়ায় পরবতীকালীন বিভাগ দ্বারা এবং দানগ্রহীতাকে তার অংশের দখল অর্পণ দ্বারা উক্ত দানকে বৈধ করা যেতে পারে।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে :
এলাহী তার একখন্ড বিভাজ্য জমি অথচ বর্তমানে অবিভাজ্য মালেককে দান করলো।দান করলে অংশটি ভাগ বাটোয়ারা করা হলে এবং এলাহী তার হেবাকৃত অংশটুকু মালেকের বরাবরে দখল প্রদান করলো।দানটি প্রথম অবস্থায় অথাত্‍ শুরুতে অনিয়মিত ছিল বর্তমানে তা নিয়মিত হয়ে গেল।একবার দখল গৃহীত হলেই দানটি বৈধ হবে।এই নিয়মের কারণ হল ,যা করা হয়েছে, তা সম্পকে যাতে কোন দ্বিধাদন্ধ না থাকে।যদি সম্পত্তিটি পৃথকভাবে দখল করা সম্ভব হয় কিন্তু তা স্বত্বেও দাতা তার  অন্য দখলীয় অংশ হতে যা দিতে চান, তা পৃথক না করেন, তাহলে কেউই বলতে পারবেন না যে তিনি কি দিতে চেয়েছিলেন এবং এর ফলে অবশ্যই দ্বিধার উদ্রেক হবে।

ব্যতিক্রমসমূহ:
অবিভক্ত অংশের হেবা যদি ও তা বিভাগযোগ্য সম্পত্তির অংশ বিশেষ তবু ও হেবা গঠনের মুহুর্ত হতে তা বৈধ হবে যদি ও নিম্ন বণির্ত ক্ষেত্রসমূহ প্রদত্ত অংশটি বিভক্ত করা হয়নি এবং দান গ্রহীতাকে তা হস্তান্তর করা হয়নি ।

শরীকের বরাবরে:
যেখানে দানটি একজন সহ উত্তরাধিকারী কর্তৃক অন্য একজন সহ উত্তরাধিকারীকে সম্পাদন করা হয়েছে সেক্ষেত্রে দানটি বৈধ হবে।
যেমন একজন মুসলিম মহিলা,মা, একছেলে এবং একমেয়ে রেখে মারা যায়।উত্তরাধিকারী সূত্রে ঐ মহিলার সম্পত্তির ষষ্ঠমাংশ তার মা পায়।তার মা তার ঐ অবিভক্ত ষষ্ঠমাংশ মরহুমার ছেলে এবং মেয়ের বরাবরে হেবা করে দেয়।প্রিভি কাউন্সিল এই হেবাকে সিদ্ধ ঘোষণা দেয়।কোন সমাজের উন্নতিশীল অবস্থায় মুশাহর মতবাদটি সম্পূর্ণভাবে অনুপযোগী এবং একে অবশ্যই খুবই সীমিত গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা উচিত।একটি দান অবিভাজ্য হওয়ায় সম্পত্তির কোন একটি অংশের দখল দানটিকে কাযর্কর করতে পারে।

জমিদারী বা তালুকের অংশ:
যেখানে দানটি একটি জমিদারী বা তালুকের অংশ সেখানে মুশাহ এর ব্যতিক্রম প্রযোজ্য।অথাত্‍  কোন জমিদারী বা তালুকের অংশ দান করা হলে দানটি বৈধ হবে। যেমন ক,খ, ও গ একটি জমিদারীতে সহ-অংশীদার। প্রত্যেক শেয়ার সরকার কতৃর্ক পৃথকভাবে হিসাবকৃত ও আদায় রহিতে পৃথক নম্বরে লিখিত এবং প্রত্যেক শেয়ারের স্বত্বাধিকারী খাজনায় একটা নির্দিষ্ট অংশ সংগ্রহের অধিকারী।ক জমিদারী ভাগ না করেই খ কে তার অংশটি দান করলো।
দানটি বৈধ।

বাণিজ্যিক শহরে লাখেরাজ সম্পত্তি:
যেখানে হেবাটি একটি বাণিজ্যিক শহরে লাখেরাজ সম্পত্তির অংশ সেখানে দানটি বৈধ হবে। যেমন ক এর রেঙ্গুনে একটি বাড়ী অাছে। সে এর ১/৩ অংশ খ কে দান করলো ।সম্পত্তিটি একটি বড় বাণিজ্যিক শহরে অবস্থিত বলে প্রদত্ত হেবা বৈধ।
কোম্পানীর শেয়ার বা অংশ:
যেখানে দানটি কোন কোম্পানীর শেয়ার বা অংশ।যেমন ক একটা কাযের্র অংশীদার। সে তার অংশের শেয়ারটি খ কে দান করলো।যতক্ষণ পযর্ন্ত  না অংশটি বিভক্ত হচ্ছে এবং খ কে দখল অর্পণ না করা হচ্ছে ততক্ষণ পযর্ন্ত  ওটি বৈধ নয়।
অপিত অবশিষ্টাংশের বা দানে অন্যকে দান: (Vested remainder or gift over):
মুসলিম আইনের কোন মতবাদেই অপিত অবশিষ্টাংশের দান বা দানে অন্যকে দান বৈধ নয়।সম্পত্তির বস্তুর উপর আইন কেবলমাত্র নিরংকুশ দখল, উত্তরাধিকারযোগ্য এবং সময়ের দৃষ্টিকোণ হতে অসীম অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় ; এবং যেক্ষেত্রে বস্তুর দানে এধরনের দখল ও অধিকারের সাথে অসংগতিপূর্ণ শর্ত আরোপ করা হয়, সেক্ষেত্রে শর্তটি পরিপন্থীরুপে প্রত্যাখাত হবে।
যেমন উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ক যদি কোন সম্পত্তি খ এবং গ কে এই শতে দান করে যে, তাদের যে কেউ ছেলে সন্তান না রেখে মারা গেলে তার অংশটি অন্যজনের কাছে চলে যাবে।আগে শিয়া আইনে এধরনের দান বৈধ ছিল।কিন্তু পরবতীর্তে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে,এই নীতি প্রযোজ্য হবে না এবং এইভাবে অন্যকে দান ( gift over  ) বাতিল হবে এবং ক  ও খ শর্তহীনভাবে তাদের স্ব স্ব অংশ প্রাপ্ত হবে।
সুন্নী আইন অনুসারে এ ধরনের দানে আরোপিত শতটি বাতিল হবে এবং ক ও খ দানকৃত সম্পত্তিতে তাদের প্রত্যেকের অংশ শর্তহীনভাবে পাবেন এবং এটি তাদের নিজ নিজ ওয়ারিশদের উপর বতাবে।

 দান প্রত্যাহার বা রদ: দান রদ বা প্রত্যাহার করা যায় কিনা প্রশ্নে জবাব এক কথায় দেয়া দুস্কর।তবে বলা যায় ক্ষেত্রবিশেষে তা রদযোগ্য।নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
দানের বস্তু দখলার্পণের আগে যে কোন সময় তা রদ করা হয়।কারণ দখল প্রদানের আগে দানটি পূর্ণভাবে কাযকরী হয় না।একবার দখল অপিত হলে, আদালতের ডিক্রী ছাড়া অন্য কিছুই দানটি রদের জন্য যথেষ্ঠ হবে না।দাতা কর্তৃক দান প্রত্য্যাহার বা রদের ঘোষণা কিংবা দান রদের জন্য মোকাদ্দমা করলেই দান রদের জন্য যথেষ্ঠ হবে না।যতক্ষণ পযর্ন্ত না আদালত ডিক্রি প্রদান করেন,ততক্ষণ পযর্ন্ত দান গ্রহীতা দানের বিষয়বস্তুটি ভোগ এবং হস্তান্তর করতে পারেন।
তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত দানের বিষয়বস্তু দানগ্রহীতার বরাবরে হস্তান্তর করলে তা রদের জন্য আদালতের ডিক্রী প্রয়োজন।
১) স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে দান করলে;
২) যেক্ষেত্রে যাকে দান করা হয়, সেব্যক্তি দাতার সাথে নিষিদ্ধ স্তরের ভেতরে সম্পকির্ত হয়;
৩) যখন দাতা বা দানগ্রহীতা মারা যায়;
৪) যখন দানের বস্তুটি দান গ্রহীতা কর্তৃক দান, বিক্রয় বা অন্যভাবে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে।
৫) যখন দানের বস্তুটি দান হারিয়ে যাবে বা ধংস্বপ্রাপ্ত হবে;
৬) যে কোন কারণেই হোক, যখন দানের বস্তুর মূল্য বৃদ্ধি পাবে;
৭) দান সম্পত্তির এমন পরিবর্তন হয়েছে, যাতে তা চিহ্নিত করা যায় না।যেমন সরিষা ভাংগিয়ে তেল তৈরী করা।
৮) যখন দাতা দানের বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করবেন।
৯) যখন দানের মূখ্য উদ্দেশ্য ধমীয় বা আধ্যাত্নিক, কারণ এক্ষেত্রে দানটি একটি ছদকা ছাড়া আর কিছুই নয়।
মুসলিম আইনে দান প্রত্যাহার বা রদ করার অধিকারটি দাতার একটি ব্যক্তিগত অধিকার এবং তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা এই দান বাতিল করতে পারে না।দান রদে গ্রহীতার আইন নয়, দাতার আইন প্রযোজ্য।একমাত্র আদালতের ডিক্রী দ্বারাই রদ সম্পূর্ণ হয়, দান রদের জন্য কেবলমাত্র দায়েরই যথেষ্ট নয়।সুতরাং দান রদের ডিক্রীর অাগে দাতার মৃত্যু হলে দাতার মৃত্যুর সংঙ্গে দান রদের অধিকার শেষ হয়ে যায় এবং যদি আপীল চলাকালে ও দাতার মৃত্যু হয়, তবে যদি প্রথম বিচারকারী আদালতে দান রদের মোকাদ্দমা কারিজ হয়ে থাকলে, সেক্ষেত্রেও দাতার মৃত্যুর ঐ অধিকারটি নষ্ট হয়ে যাবে।কিন্তু যদি মোকদ্দমাটি দানের দলিল বাতিলের জন্য হয়ে থাকে, তবে বাদীর মৃত্যু হলে ও মোকাদ্দমা বা সেই অধিকার টিকে থাকবে এবং তার স্থলে তার বৈধ প্রতিনিধিদেরকে স্থলাভিষিক্ত করা যাবে।
যখন দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দখল অর্পণ করা হয়েছে,তখন একমাত্র আদালতের ডিক্রী দ্বারাই দান রদ করা যাবে।ডিক্রী না হওয়া পযর্ন্ত গ্রহীতা দানের বস্তু ভোগ ও হস্তান্তর করতে পারবে।অবশ্য হেবা যদি প্রতারণামূলে হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীগণের মামলা করার অধিকার থাকে।
আইনের মাধ্যমে দান বাতিল বা প্রত্যাহৃত হতে পারে ।সে আইন হচ্ছে চুক্তি আইনের ১৯ ধারা। চুক্তি আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে জোর করে অযথা প্রভাব খাটিয়ে বা প্রতারণা করে বা মিথ্যা বিবরণ দিয়ে যখন অঙ্গীকার আদায় করা হয় তখন সেই অঙ্গীকারভিত্তিক চুক্তি আহত ব্যক্তির ইচ্ছাধীনে বাতিলযোগ্য।দাতা যদি একারণে একজন বৃদ্ধা এবং অশক্ত মহিলা হন কিংবা তিনি যদি পদার্নশীল হন,তবে দানগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে যে, এই দান স্বেচ্ছামূলক।যেক্ষেত্রে দাতার অবস্থা এমন যে তিনি দানগ্রহীতার প্রভাবাধীনে আছেন, সেক্ষেত্রেও দানগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হয় যে তা সেচ্ছামূলক।

হেবা -বিল-এওয়াজ প্রত্যাহার:
হেবা-বিল এওয়াজে যে পযর্ন্ত না দান গ্রহীতা বিনিময় প্রদান করে সে পযর্ন্ত তা প্রত্যাহারযোগ্য।কিন্তু এওয়াজ প্রাপ্ত হলে তা অপ্রত্যাহারযোগ্য হয়ে যাবে।
তথাপি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রসমূহে তা প্রত্যাহারযোগ্য হতে পারে।
১) যদি হেবার এক অংশের এওয়াজ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহলে অন্য অংশ প্রত্যাহার করা যাবে।
২) পিতা নাবালেগ সন্তানের পক্ষের অন্য কাউকেও সম্পত্তি দান করলে, তা নাবালেগ কর্তৃক কিংবা দান গ্রহ্রীতা কতৃর্ক প্রত্যাহৃত হতে পারে।
৩) যদি সম্পত্তি বেদখল করার জন্য সাব্যস্ত হয়, তাহলে তা দান গ্রহীতা কর্তৃক প্রত্যাহৃত হতে পারে এবং সে এওয়াজ আদায় করে নিতে পারে ।
৪) যদি এওয়াজ অন্যের বিরুদ্ধ দাবীক্রমে তা প্রমাণিত হয়, কিংবা আংশিকভাবে উদ্ধার করা হয় তাহলে দাতা প্রথম ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে এবং
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করেই হেবা সম্পূর্ণ করতে পারে কিংবা তা প্রত্যাহার করতে পারে।
৫) যখন দুইজনকে হেবা দিয়ে দান করা হয়, তার মধ্যে শুধু একজনের কাছ হতে এওয়াজপ্রাপ্ত হলে দ্বিতীয় জনের অনুকূলে হেবা প্রত্যাহার করা যাবে। 
৬) যদি দান-গ্রহীতার পথ হতে অন্য কেউ এওয়াজ প্রদান করে এবং যদি দানগ্রহীতা ঐ এওয়াজ দাতার সঙ্গে ঐ এওয়াজ পরিশোধ করার জন্য কোন প্রকার চুক্তিবদ্ধ না হয়, তাহলে হেবার দাতা ঐ হেবা প্রত্যাহার করতে পারবে।

No comments:

Post a Comment