Tuesday, August 19, 2014

৯.১.৫ ভূমি বিষয়ক বিদ্যমান আইনে সর্বশেষ সংশোধন



রেজিষ্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪
(১) কোন সম্পত্তির মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন (সংশোধন) আইনের ১৭(১) ধারার বিধান অনুসারে বাটোয়ারা বা আপোস-বন্টননামা রেজিস্ট্রি করতে হবে।
(২) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় দলিল রেজিস্ট্রেশন (সংশোধণ) আইনের ১৭এ (১) ধারার বিধান অনুসারে অবশ্রই লিখিত এবং রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে।
(৩) বিক্রয় চুক্তি/বায়না চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে চুক্তিপত্রটি রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করতে হবে {ধারা ১৭এ (২)।
(৪) প্রতিটি হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে, রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রীত সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণ এবং বিক্রয়ের প্রকৃতি বর্ণনা করতে হবে। {ধারা ২২এ(১)।
(৫) প্রতিটি দলিলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের ছবি পেষ্ট করে সংযুক্ত করতে হবে, উক্ত ছবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর/বাম বৃদ্ধাঙ্গুলীর টিপসইযুক্ত হবে {ধারা ২২এ(২)।
(৬) সরকার এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে (দলিলের/চুক্তিপত্রের) নির্ধারিত ফরমেট জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবেন {ধারা ২২এ (৩)।
(৭) দলিল সম্পাদনের ৩ মাসের মধ্যে তা রেজিষ্ট্রির জন্য দলিল করতে হবে (যা পূর্বে ছিল ৪ মাস (ধারা ২৩)।

বিক্রয়ের বায়না চুক্তি, দান দলিল ও বন্ধক দলিল রেজিস্ট্রি ফিঃ
রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এ নতুন সংযোজিত ৭৮এ ধারা অনুসারে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির বায়না চুক্তি, দান দলিল ও বন্ধক দলিল রেজিস্ট্রি ফি হবে নিমড়বরূপঃ
(এ) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির বায়না চুক্তি রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফি হবেঃ
(i) সম্পত্তি বিক্রয়ের বায়না/চুক্তিপত্রের জন্য ষ্ট্যাম্প শুল্ক মাত্র ১৫০ টাকা।
(ii) বিক্রয়তব্য সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশী না হলে ফি ৫০০ টাকা।
(iii) সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি কিন্তু পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশী না হলে ফি ১০০০ টাকা।
(iv) সম্পত্তির মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশী হলে ফি ২০০০ টাকা।

(বি) দান দলিল রেজিস্ট্রি ফিঃ
মুসলিম পারসোনাল ল’ (শরীয়ত) অনুসারে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনী, সহোদর ভাই-ভাই, সহোদর বোন-বোন এবং সহোদর ভাই ও সহোদর বোনের মধ্যে যে কোনো স্থাবর সম্পত্তির দান দলিল বা দান চুক্তি রেজিস্ট্রি ফি মাত্র ১০০ টাকা।

(সি) বন্ধক (Mortgage)চুক্তি রেজিস্ট্রি ফিঃ
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ৫৯ ধারার বিধান অনুসারে-
(i) বন্ধবী অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে না হলে ফি বন্ধকী অর্থের ১% তবে ২০০ টাকার নিমেড়ব নয় এবং ৫০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।
(ii) বন্ধকী অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ টাকার উপরে কিন্তু বিশ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে না হলে ফি বন্ধকী অর্থের ০.২৫% (শূন্য দশমিক এক শূন্য শতাংশ) টাকা হারে তবে ৩০০০ টাকার কম নয় এবং ৫,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।
(iii) বন্ধকী অর্থের পরিমাণ বিশ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে হরে সে চুক্তি রেজিস্ট্রি ফি লাগবে বন্ধকী অর্থের ০.১০% (শূন্য দশমিক এক শূন্য শতাংশ) টাকা হারে তবে ৩০০০ টাকার কম নয় এবং ৫,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।

সম্পত্তি হস্তান্তর (সংশোধন) আইন ২০০৪-এ নতুন সংযোজিত ধারাসমূহ হলোঃ
বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবে নাঃ এ আইনের ৫৩ডি ধারার বিধান অনুসারে রেজিস্ট্রিকৃত বন্ধকভূক্ত সম্পত্তি বন্ধক গ্রহীতার লিখিত সম্মতি ব্যতীত পুনবন্ধক দেয়া যাবে না এবং বিক্রি করা যাবে না। এরূপ করা হরে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
বিক্রয় চুক্তি অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবেঃ
সম্পত্তি হস্তান্তর (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর ৫৪এ ধারা অনুসারে অস্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় চুক্তি হবে লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর ২১এ ধারার বিধান অনুসারে আদালতের মাধ্যমে চুক্তি বলবতের দুই শর্ত হলোঃ
(১) লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত বায়না ব্যতীত চুক্তি প্রবলের মামলা আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করা যাবে না।
(২) বায়নার অবশিষ্ট টাকা আদালতে জমা না করলে মামলা দায়ের করা যাবে না।

রেজিস্ট্রিকারে যে সকল বিষয় সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট পেশ করতে হবেঃ
দলিল রেজিস্ট্রারিং অফিসার এ আইনে নতুন সংযোজিত ৫২এ ধারার বিধান অনুসারে বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপিত কোন দলিল রেজিস্ট্রি করবেন না যদি দলিলের সাথে নিমেড়বাক্ত তথ্যাদি সংযুক্ত না থাকেঃ
(এ) রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর বিধান অনুসারে প্রস্ত্ততকৃত সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান, বিক্রেতার নাম যদি তিনি উত্তরাধিকারসূত্র ব্যতীত অন্যভাব সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন।
(বি) প্রজাস্বত্ব আইনের বিধান অনুসারে প্রস্ত্ততকৃত সর্বশেষ খতিয়ান, বিক্রেতার নাম বা বিক্রেতার পূর্বসূরীর নাম যদি তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে ঐ সম্পত্তি পেয়ে থাকেন।
(সি) সম্পত্তির প্রকৃতি।
(ডি) সম্পত্তির মূল্য।
(ই) চতুর্সীমা সহ সম্পত্তির নকশা।
(এফ) বিগত ২৫ বৎসরের মালিকানা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
(জি) দাতা কর্তৃক এ মর্মে একটি হলফনামা (Affidavit) সম্পাদন করতে হবে যে তিনি উক্ত সম্পত্তি ইতোপূর্বে কারো নিকট বিক্রি করেননি এবং তিনিই দলিলে উল্লেখিত
সম্পত্তির মালিক (He has Lawful Title)।

তামাদি (সংশোধন) আইন ২০০৪ঃ
তামাদি (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর বিধান অনুসারে এ আইনের প্রথম সিডিউল ১ মোতাবেক বায়না চুক্তি বলবৎ হওয়ার পর তা ১ বৎসর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে অর্থাৎ পূর্বে যেখানে বায়না চুক্তি আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করার জন্য ৩ বৎসর পর্যন্ত সময় পাওয়া
যেত এখন সেখানে ১ বৎসর সময় পাওয়া যাবে। ১ বৎসর পর এরূপ চুক্তি আদালতের মাধ্যমে আর বলবৎ করা যাবে না।

দান এবং দান করার বিধানঃ
দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলে। কারো নিকট হতে প্রতিদান ব্যতীত অর্থাৎ বিনিময় ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করাই হলো দান। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ (টিপি এ্যাক্ট) এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তি দাতা কোন ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোন ব্যক্তি ঐ সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাকে দান বলে।

দান বৈধ হওয়ার ৩ শর্তঃ
(১) দাতা কর্তৃক দানের (ইজাব) ঘোষণা প্রদান।
(২) গ্রহীতা তার পক্ষ হতে দান গ্রহণ করা বা স্বীকার করা।
(৩) দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান।
দানের উপাদান সমূহঃ
(১) দাতাকে সুস্থ মস্তিষ্কের সাবালক ব্যক্তি হতে হবে।
(২) দাতার জীবনকালের মধ্যে দান কার্য সম্পনড়ব হতে হবে।
(৩) দান গ্রহণের পূর্বে দাতার মৃত্যু হলে দান বাতিল বলে গণ্য হবে।
(৪) দানের সময় সম্পত্তিতে দাতার মারিকানা ও দখল থাকতে হবে।
(৫) দান স্বেচ্ছায় এবং পণবিহীন হতে হবে।
(৬) দান গ্রহীতা মানসিক ভারসাম্যহীন বা নাবালক হরে তার পক্ষে অভিভাবক দান গ্রহণ করতে পারবেন। দান যে কেউ গ্রহণ করতে পারেন।
(৭) মুসলিম আইন অনুযায়ী দাতা তার সমুদয় সম্পত্তি যে কাউকে দান করতে পারেন। দায়ভাগ মতে একজন হিন্দু যাদের ভরণপোষণে আইনত বাধ্য তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখার পর বাকী সম্পত্তি দান করতে পারেন।
(৮) দখল হস্তান্তরের পূর্বে দান প্রত্যাহার করা যায়। দখল হস্তান্তরের পরে দান প্রত্যাহারের জন্য আদালতের ডিক্রি লাগবে।
(৯) দানকারী ঋণের দায় এড়ানোর বা অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে দান করলে, পাওনাদারের আবেদনে ঐ দান বাতিলযোগ্য হতে পারে।
(১০) মৃত্যুশয্যাকালীন দান উইলের ন্যায় কার্যকরী হবে অর্থাৎ ঐ দান অনাত্মীয়ের অনুকূলে করা যাবে কিন্তু মোট সম্পত্তির ১/৩ ভাগের বেশী দান করা যাবে না। তবে উত্তরাধিকারীগণের সম্মতি থাকলে অআত্মীয়কে ১/৩ ভাগের অধিক সম্পত্তি দান করা যাবে। এ অবস্থায় কোন উত্তরাধিকারীকে দান করা যাবে না।
(১১) রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এর ৭৮এ ধারা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা অনুযায়ী দান লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে।
(১২) অজাত ব্যক্তি বরাবরে দান করলে দানের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে সে জন্ম গ্রহণ কররে সে দান বৈধ হবে।

দান দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলকঃ
রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ এ নতুন সংযোজিত ৭৮এ ধারা অনুসারে স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। দান দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি হবে
নিমড়বরূপঃ
স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা-সন্তান, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনী, সহোদর ভাই-ভাই, সহোদর বো-বোন এবং সহোদর ভাই ও সহোদর বোনের মধ্যে যে কোনো স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রি ফি দিতে হবে মাত্র ১০০ টাকা। তবে উলিলখিত সম্পর্কের বাইরের
ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সম্পাদিত দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রির ফি হবে কবলা দলিল রেজিস্ট্রির জন্য প্রযোজ্য ফি’র অনুরূপ।
জীবন স্বত্ত্বে দান দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিঃ
স্প্যাম্প এ্যাক্ট ১৯০৮ এর ৫৮ নং আর্টিক্যাল অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান (মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান) এর জন্য জীবন স্বত্ত্বে দানের বিধান হলো-যে প্রতিষ্ঠানের নামে সম্পত্তি দান করা হবে সে প্রতিষ্ঠান ঐ সম্পত্তি শুধু ভোগ-দখল করতে পারবে, সম্পত্তি কোনরূপ হস্তান্তর করতে পারবে না। এরূপ জমির ভূমি উনড়বয়ন কর পরিশোধ করতে হবে দানকারীর নামে। কোন কারণে ঐ প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর না থাকলে সম্পত্তি দানকারীর মালিকানায় চলে যাবে এবং দান দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। জীবন স্বত্ত্বের দান দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে ২% স্ট্যাম্প ফি, ২.৫% রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ই ফিস লাগবে।
হেবা-বিল এওয়াজঃ
মুসলিম আইন অনুসারে কোন কিছু বিনিময় নিয়ে দান করাকে বলে এওয়াজ বা হেবাবিল-এওয়াজ। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ১১৮ ধারা অনুসারে দু’জন ব্যক্তি যে ক্ষেত্রে পরস্পর নিজেদের মালিকানাধীন কোন জিনিসের মালিকানা হস্তান্তর করে সেক্ষেত্রে
কোন একটি জিনিস টাকা না হলে সে আদান-প্রদানকে বলে এওয়াজ বা বিনিময়। এতে বিক্রয় চুক্তির উপাদান বিদ্যমান থাকায় এটি মূলত এক ধরনের বিক্রয়। এওয়াজ দলিলে বর্ণিত সম্পত্তির একজন দাতা তার নিজের সম্পত্তি অপরজনকে দেওয়ার পর তার প্রাপ্য সম্পত্তি তিনি না পেলে তিনি তার প্রদত্ত সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার অধিকারী হবেন। হেবা বিল এওয়াজ অগ্রক্রয়যোগ্য নয়।

হেবা-বিল-এওয়াজ এর উপাদানসমূহঃ
(১) গ্রহীতাকে হেবা গ্রহণের বিনিময়ে দাতাকে অবশ্যই কিছু দিতে হবে।
(২) দানের মাধ্যমে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিঃস্বত্বে পরিণত করতে হবে।
(৩) হেবা-বির এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল দান আবশ্যক নয়।
(৪) হেবা-বিল-এওয়াজ প্রত্যাহারযোগ্য নয়।
উইল বা অছিয়তের বিধানঃ উইল হলো ভবিষ্যৎ দান। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বা সম্পত্তির মুনাফা কিভাবে বিলি-বন্টন করা হবে তা তার মৃত্যুর পূর্বেই লিখিত বা মৌখিকভাবে নির্ধারণ করে যাওয়ার আইন সম্মত ঘোষণাই হলো উইল বা অছিয়ত।

উইলের শর্তঃ
(ক) মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান এ তিন সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকার আইনেরই বিধান হলো যে, সুস্থা মস্কিষ্কসম্পনড়ব যে কোন সাবালক ব্যক্তি উইল করতে পারবেন।
(খ) উইলকারীর ইচ্ছা সুস্পষ্ট ও সঠিকভাবে নির্ণয়যোগ্য হতে হবে।
(গ) উইল, উইল দাতার মৃত্যুর পর কার্যকর হবে।
(ঘ) উইল যে কেউ গ্রহণ করতে পারেন।
উইলের উদ্দেশ্যঃ উইল করা যায় (ক) ব্যক্তির উদ্দেশ্যে এবং (খ) ধর্মীয় উদ্দেশ্যে। ব্যক্তির উদ্দেশ্যে উইল আবার দু’প্রকার (১) ওয়ারিশের বরাবরে উইল এবং (২) ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তির বরাবরে উইল।
ওয়ারিশের বরাবরে সম্পাদিত উইলের বিধানঃ
(ক) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে উইল বাতিল বলে গণ্য হবে।
(খ) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে উইল সম্পূর্ণ কার্যকরী হবে।
(গ) ওয়ারিশদের সম্মতি কার্যকর হবে উইল দাতার মৃত্যুর পর।

ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তি বরাবরে সম্পাদিত উইলের বিধানঃ
(ক) ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে উইল সম্পূর্ণ কার্যকরী হবে।
(খ) ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে উইল দাতার নিট সম্পত্তির ১/৩ এর উপর উইল কার্যকরী হবে।
নিট সম্পত্তিঃ উইলদাতার মোট সম্পত্তি হতে নিমড়বরূপ ব্যয় পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি নিট সম্পত্তি বলে গণ্য হবে, উইল সর্বদা নিট সম্পত্তির উপর প্রযোজ্য হবেঃ
(ক) উইল দাতার মৃত্যুর অব্যবহিত ৩ মাস পূর্বের ভৃত্য বা চাকরের পাওয়ানাদি।
(খ) মৃত্যু শয্যাকালীন খরচাদি।
(গ) মৃত্যুর পর দাফন-কাফনের খরচ।
(ঘ) স্ত্রীর দেন-মোহরের পাওয়ানা পরিশোধ ব্যয়।
(ঙ) উইল প্রবেট এবং সাকসেশন সার্টিফিকেট ব্যয়।
(চ) ঋণ পরিশোধ (আগের ঋণ আগে পরিশোধ ভিত্তিতে)।
(ছ) ঋণ পরিশোধের আগে স্ত্রীর দেন-মোহর পরিশোধ করতে হবে।

ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উইলঃ ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উইল করা হলে তাতে ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে সে উইল সম্পূর্ণ কার্যকর হবে, আর ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে অছিতকারীর নিট সম্পত্তির ১/৩ অংশের উপর উইল কার্যকরী হবে।
ধর্মীয় উইল ৩ প্রকার, যথা-
(১) ফরজ কাজের উদ্দেশ্যে, যেমন- হজ্জ্ব পালন, যাকাত প্রদান ইত্যাদি।
(২) ওয়াজিব কাজের উদ্দেশ্যে, যেমন- ফিতরা প্রদান, কোরবানী করা ইত্যাদি।
(৩) নফল কাজের উদ্দেশ্যে, যেমন- সরাইখানা, রাস্তা-পুল, এতিমখানা নির্মাণ ইত্যাদি।

উইলের উপাদানঃ
(১) একই সম্পত্তি নিয়ে একাধিক উইল করা হলে সর্বশেষ উইলটি সর্বপ্রথম কার্যকরী হবে এবং সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকা সাপেক্ষে পরবর্তী উইলগুলো কার্যকরী হবে।
(২) অজাত ব্যক্তি উইলের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে জন্মগ্রহণ করলে তার বরাবরে করা উইল বৈধ হবে।
(৩) উইল মৌখিক ও লিখিত দু’ভাবেই করা যায়। এমনকি অসামর্থ্যের কারণে ইঙ্গিতেও করা যায়। তবে মৌখিক উইলের ক্ষেত্রে ২ জন পুরুষ বা ১ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতিতে হতে হবে।
(৪) নাবালক উত্তরাধিকারী সাবলকত্ব লাভের পর উইলে সম্মতি দিতে পারবেন।
(৫) উইল দাতা মৃত্যুর পূর্বে যে কোন সময় উইল বাতিল করতে পারেন। সম্পত্তি একবার উইল করার পর পুনরায় তা অন্য কারো অনুকূলে উইল করলে পূর্বের উইলটি স্বয়ংক্রীয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। উইল বাতিলের জন্য মামলার প্রয়োজন হয় না।
(৬) ১৮৭০ সনের হিন্দু আইন অনুসারে একজন হিন্দু তার সকল সম্পত্তি উইল করতে পারেন, তবে যাদের ভরণপোষনের জন্য তিনি আইনত বাধ্য তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রেখে বাকী সম্পত্তি উইল করতে হবে।
(৭) উইলকারীর কোন উত্তরাধিকারী না থাকলে তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে উইল করে দিতে পারেন।
(৮) উইল গ্রহণকারীকে দাতার মৃত্যুর সময় জীবিত থাকতে হবে।
(৯) উইলকারী মৃত্যুর মুহূর্ত হতে উইল কার্যকর হবে।

উইল বিলুপ্তিঃ নিমেড়বাক্ত কারণে উইল বাতিল বলে গণ্য হবেঃ
(১) উইলের পর উইলদাতা বিকৃত মস্তিষ্ক হলে, মৃত্যুর পূর্বে তিনি সুস্থ হলেও।
(২) উইল গ্রহীতা দাতার আগে মারা গেলে।
(৩) উইল দাতা বা গ্রহীতা ধর্ম ত্যাগ করলে
(৪) উইল গ্রহীতা দাতাকে হত্যা করলে।
 (৫) উইলকৃত সম্পত্তির উপর অন্য কারো অধিকার সাব্যস্ত হলে।
(৬) উইলকারী উইলকৃত সম্পত্তি বিক্রি বা দান করলে বা তাতে বাড়ি তৈরি করলে।
উইল প্রবেটঃ
উইল বা অছিয়তের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে তার সম্পত্তি উইল করে গেলে উইলটি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারবান দেওয়ানি আদালতের অনুমোদন লাগবে, এরূপ অনুমোদন নেয়াকেই বরে উইল প্রবেট। প্রবেট মুসলিম উইলে আবশ্যকীয় নয়। প্রবেটের জন্য আদালতে আবেদন করা হলে অপরাপর ওযারিশদের মতামত জানার জন্য আদালত হতে নোটিশ দেয়া হয়, এ সময় ওয়ারিশগণ উইলের বিরুদ্ধে অসম্মতি জানাতে পারেন। এছাড়া আদালত কালেক্টরের নিকট সম্পত্তির কোর্ট ফি সঠিক আছে কিনা, সম্পত্তিটি সরকারের কিনা, সম্পত্তিটি উইলদাতার কিনা এতে আর কারো স্বার্থ আছে কিনা ইত্যাদি জানতে চেয়ে থাকেন।
দান ও উইলের পার্থক্যঃ
(১) দান সাথে সাথে কার্যকর হয়, উইল কার্যকর হয় অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর।
(২) দান সম্পনড়ব হওয়ার পর আদালতের রায় ব্যতীত তা আর প্রত্যাহার করা যায় না। কিন্তু উইল ইচ্ছেমত বাতিল করা যায়।
(৩) দান করার সময় দানের সম্পত্তিতে দাতার মালিকানা ও দখল থাকতে হবে অন্যদিকে মৃত্যুর পূর্বে পাওয়া যাবে এরূপ যে কোন সম্পত্তি উইল করা যাবে।
সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পনড়ব হবেঃ
১। সম্পত্তি যখন কোন জীবিত ব্যক্তির বরাবরে হস্তান্তর হবে;
২। হস্তান্তর যখন টাকা বা কোন কিছুর বিনিময়ে হবে;
৩। দান চুক্তির হস্তান্তর বিনিময় ছাড়াও বৈধ হবে;
৪। সম্পত্তি হস্তান্তরের চুক্তি যখন রেজিস্ট্রি করা হবে;
৫। চুক্তি রেজিস্ট্রির পরপরই হস্তান্তর কার্যকর হবে।
হস্তান্তরের যোগ্যতা সপ্নন্ন ব্যক্তিঃ
১। চুক্তি সম্পাদনের যোগ্যতা সম্পনড়ব ব্যক্তি হস্তান্তরযোগ্য সম্পত্তির স্বাত্ত্বাধিকারী হরে তিনি সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন;
২। সম্পত্তিটি হস্তান্তরকারীর নিজের না হলে উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করার অধিকার তার থাকতে হবে;
৩। হস্তান্তরের যোগ্যতা বলতে হস্তান্তরকারী সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পনড়ব ব্যক্তি হবেন;
হস্তান্তর বলবৎঃ সম্পত্তি হস্তান্তরের সাথে সাথে ঐ সম্পত্তির দাতার সকল হস্তান্তরযোগ্য স্বার্থ গ্রহীতার উপর বর্তাবে।
বিক্রয় চুক্তি ও বিক্রয়ঃ বিক্রয়ের চুক্তি ও বিক্রয় এক বিষয় নয়, বিক্রয়ের চুক্তি হচ্ছে

ক্রেতা ও বিক্রেতার মথ্যে একটি সমঝোতা। বিক্রয় ব্যতীত শুধু বিক্রয়ের চুক্তি দ্বারা কোন স্বত্ত্বের সৃষ্টি হয় না।
◊ নাবালক ব্যক্তি সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে না কিন্তু সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে নাবালকের কোন বাধা নেই।
◊ কোন হস্তান্তরের চুক্তির ফলে চুক্তির পক্ষসমূহ বা দাতা ও হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যতীত অন্য কারো স্বার্থ ক্ষুনড়ব হলে উক্ত হস্তান্তর বাতিল বলে গণ্য হবে।
◊ কোন বিক্রেতা একই সম্পত্তি একাধিক ব্যক্তির নিকট বৈধ দলিল রেজিস্ট্রিমূলে বিক্রি করলেও দু’টি দলিলের মধ্যে প্রথম সম্পাদিত দলিলটি আইনত বলবৎ হবে।

No comments:

Post a Comment